দৃঢ় করি ঈমান ::::: মে – ’১২

ঈমানধ্বংসী কুপ্রথা

রুকাইয়া সালাম

 

মানুষের জন্য যা গ্রহণীয় এবং যা বর্জনীয় তা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর হাবীব হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু পরম পরিতাপের বিষয় হচ্ছে – বর্তমানে অনেক মুসলমান সঠিক দ্বীনী জ্ঞানের অভাবে দৈনন্দিন বিভিন্ন বিষয়ে নানারকম কুসংস্কার ও কুপ্রথায় জড়িয়ে পড়েছেন।

অসংখ্য কুসংস্কারের ফাঁদে আটকে আছে আমাদের সমাজ। এর কোনটা মারাত্মক ঈমানধ্বংসী পর্যায়ের, কোনটা বিদ‘আত পর্যায়ের, আবার কোনটা কবীরা গুনাহ পর্যায়ের। উদাহরণ স্বরূপ নিম্নে কিছু কুপ্রথাও কুসংস্কারের বর্ণনাপেশ করা হল –

১। অনেক স্থানে প্রচলন রয়েছে যে, কুরআন শরীফ হাত থেকে পড়ে গেলে, কুরআন শরীফ পাল্লায় তুলে সেই পরিমাণ জিনিস সদকা দেয়।

: শরীয়তে এর কোন ভিত্তিনেই। তাই এরকম করা অনুচিত। বস্তুত কুরআন শরীফ পাল্লায় তোলা বেআদবীর শামিল। বরং কখনো ভুলে কুরআন শরীফ হাত থেকে পড়ে গেলে, সেজন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা কর্তব্য।

২। অনেকে বলে, অন্ধকারে নামায পড়লে, নামায হয় না।

: এটা ভুল ধারণা। অন্ধকারে কিবলা ঠিক রেখে নামায পড়লে নামায হয়ে যাবে। অবশ্য কিবলা ঠিক রাখার জন্য ন্যূনতম আলোর ব্যবস্থা রাখা উত্তম।

৩। কথিত আছে, কোন স্বামী-স্ত্রী বিশটি সন্তান জন্ম দিলে, তাদের বিবাহ ভেঙ্গে যায়। তাই তখন পুনরায় তাদের বিবাহ দোহরিয়ে নিতে হয়।

: এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা ও কুসংস্কার। সন্তান যতই হোক, এতে কখনও বিবাহ ভাঙ্গবে না বা বিবাহ দোহরাতে হবে না।

৪। অনেকের ধারণা, মহিলাদের জন্য পুরুষদের পূর্বে আহার করা নিষেধ।

: এটা ভুল ধারণা। শরীয়তে এর কোন ভিত্তি নেই। বরং প্রয়োজন হলে, মহিলাগণ আগেও খেয়ে নিতে পারেন।

৫। অনেকের ধারণা, পরীক্ষার পূর্বে ডিম খেলে, পরীক্ষায় ডিম (শূন্য) পায়। অর্থাৎ ভাল রেজাল্ট হয় না।

: এটি ভিত্তিহীন কুসংস্কার। এরূপ কথা বিশ্বাস করা ঈমানের  জন্য ক্ষতিকর।

৬। দাঁড় কাক ডাকলে অনেকে মনে করে, বড় ধরনের বিপদ আসবে।

: এ ধারণা ঠিক নয়। এটা নিছক কুসংস্কার।

৭। হাত থেকে থালা বা অন্যকিছু পড়ে গেলে, বাড়ীতে মেহমান আসবে বলে ভাবা হয়।

: এটা একটা ভুল বিশ্বাস। শরীয়তে এর কোন ভিত্তি নেই।

৮। যাত্রার সময় পথে খালি কলস দেখলে অনেকে ফিরে আসে। তাদের ধারণা, খালি কলস দেখে যাত্রা করলে, যাত্রা শুভ হয় না।

: এটা কুসংস্কার। খালি কলসের সাথে মানুষের যাত্রারশুভ-অশুভের কোন সম্পর্ক নেই।

৯। অনেকে বলে, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মিসওয়াক করলে মানুষ গরীব হয়ে যায়। আবার বলে, রাতে আয়না দিয়ে মুখ দেখলে মানুষ গরীব হয়ে যায়।

: এ দু’টি কথার কোনটিরই ভিত্তি নেই। এগুলো কুপ্রথা ও কুসংস্কার।

১০। অনেকে কালো কাপড় পরিধান করে না। তারা মনে করে, কালো কাপড় জাহান্নামের কাপড়।

: এটা একদম ভুল ধারণা। শরীয়তে এর কোন ভিত্তি নেই।

১১। অনেকে বলে, জোড়া কলা খেলে জমজ সন্তান হয়।

: এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা ও ভিত্তিহীন কুসংস্কার।

১২। অনেক মহিলার ধারণা, মসজিদে পুরুষদের জামা‘আত হওয়ার আগে মহিলারা ঘরে নামায পড়লে নামায হয় না।

: এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। শরীয়তে এর কোন ভিত্তি নেই। বরং নামাযের সময় বা আযান হওয়ার সাথে সাথে মহিলারা ঘরে নামায আদায় করে নিতে পারবে। বরং মহিলাদের জন্য এটাই উত্তম।

১৩। জিহ্বা কামড় লাগলে, অনেকে মনে করে, কেউ তাকে গালি দিচ্ছে।

: এটা কুসংস্কার। জিহ্বায় কামড় লাগার সাথে মানুষের গালির কোন সম্পর্ক নেই।

১৪। কোন কিছু পানাহার করার সময় যদি কিছু নাকে উঠে আসে, তবে বলা হয় – কেউ তাকে স্মরণ করছে।

: এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কুসংস্কার। এ ধরনের কথা বলাও গুনাহ, বিশ্বাস করাও গুনাহ।

১৫। কারো নাম উচ্চারণ করার সময় সে উপস্থিত হলে, বলা হয়ে থাকে – তুমি অনেক দিন বাঁচবে, এইমাত্র তোমার কথা বলছিলাম।

: এটা ভিত্তিহীন কুপ্রথা ও কুসংস্কার। কুরআন ও হাদীসে এর কোন ভিত্তি নেই।

১৬। অনেকে বলে, কবরের দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করলে, আঙ্গুল মুখের ভিতরে নিয়ে চোখ বন্ধ করে হালকা কামড় দিতে হবে। অন্যথায় ক্ষতি হবে।

: এটা কুসংস্কার। তা অবশ্যই বর্জনীয়।

১৭। কথা বলতে থাকা অবস্থায় টিকটিকি ডাকলে অনেকে বলে – আমার কথা সত্য। কেননা, টিকটিকি বলেছে “ঠিক ঠিক”।

: এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। মানুষের কথা বলার সাথে টিকটিকির ডাকের কোন সম্পর্ক নেই।

১৮। কেউ কেউ বলে, এক লোকমা ভাত খেতে হয় না বা কাউকে খাইয়ে দিতে হয় না। সেজন্য আরেক লোকমা খাইয়ে দেয়া হয়। অন্যথায় নাকি পানিতে পড়ে যায়।

: এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এরকম বিশ্বাস করা ঈমানের জন্য ক্ষতিকর।

এখানে সমাজে প্রচলিত কিছু কুসংস্কারের বিবরণ দেয়া হল। এরকম আরো বহু কুসংস্কার ও কুপ্রথা সমাজে প্রচলিত আছে, যার বর্ণনা এই স্বল্প পরিসরে দেয়া সম্ভব নয়। আমাদের দ্বীন ও ঈমানকে রক্ষা করার জন্য এগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।

Related posts

Leave a Comment